ঢাকা, ২৯ জুলাই (আরিফিন খান ইমন): গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার রাতে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, "বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূল করতে ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।" তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছেন।
১৯ জুলাই রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪ দলের সর্বশেষ বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে দেশে কারফিউ জারি এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ১০ দিনের মধ্যে আবারও জরুরি বৈঠক ডাকা হয়, যেখানে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন আগেই জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন বাতিল করেছিল।
গণভবনে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকের শুরুতে বলেন, "সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় যে নাশকতা, আগুন দেওয়ার ঘটনা ও পুলিশের ওপর আক্রমণ হয়েছে, এর পেছনে জামায়াত-শিবির রয়েছে। এই বিষয়ে তাঁর কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। এক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে জামায়াত-শিবিরের প্রশিক্ষিত লোকজনকে ঢাকায় জড়ো করা হয়। তাঁদের কর্মকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী।"
বৈঠকে এরপর শরিক দলের নেতারা একে একে বক্তৃতা দেন। ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, "বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার বিশ্লেষণ দরকার আছে। জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের বিষয়টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সময়ই এসেছিল। তখন করা হয়নি, এখন বিবেচনায় নেওয়া যায়।"
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু সরাসরি জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, "জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার এখনই সময়। পাশাপাশি এই বিষয়ে জনমত গঠনে রাজপথে মিছিল-সমাবেশ করার প্রস্তাব দেন।"
সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, "জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বিকল্প রাজনৈতিক শক্তিগুলোকেও এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।"
জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলামও জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দেন এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, "আস্তে আস্তে মাধ্যমিক স্কুলগুলো খুলে দিয়ে পরীক্ষা শুরু করা উচিত।"
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী উল্লেখ করেন যে তিনি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য মামলা করেছিলেন এবং তিনি জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার জোরালো দাবি জানান। শেষে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে সভার সমাপনী টানার কথা বলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তিনি বলেন, "বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারই করা উচিত।"